জাতীয় কবির ১২৪তম জন্মবার্ষিকী আজ

খবরটিভি ডেস্ক 

আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে—মনে অপার দুঃখ নিয়ে গেয়েছিলেন কবি নজরুল। তবে তার লেখা গান সত্যি হয়েছে। তাকে সত্যিই ভোলা যায় না। অস্তিত্বে মিশে আছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। গণমানুষের প্রিয় কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী। সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উত্স। এবারের ১২৪তম নজরুলজয়ন্তীর প্রতিপাদ্য ‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ : বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ’।

মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিতে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-’ কবিতায় ঘোষণা দিয়েই বাংলা সাহিত্যে পা রাখেন আমাদের জাতীয় কবি ।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সাম্য ও মানবতার কবি  কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে। আমি বিশ্বাস করি, নজরুলের রচনা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে সব কূপমণ্ডূকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

কবিতায় ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ এ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের সামনে আবির্ভূত হন ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে। আজও কবির নানা ধরনের লেখার মধ্য থেকে বিদ্রোহের পঙিক্তমালা বাঙালির হৃদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রেরণা জোগায়। তার কবিতা ‘চ্ল চল্ চল্’ বাংলাদেশের রণসংগীত। কবির এমন অজস্র রচনা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙালিদের দিয়েছে শক্তি, জুগিয়েছে প্রেরণা। এখনো সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে তার রচনা আমাদের গভীরভাবে উদ্দীপ্ত করে। রবীন্দ্রসৃষ্ট বিশাল জগতের পাশে কবি নজরুল গড়ে তোলেন নিজস্ব জগৎ।

কর্মসূচি : জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এবার জাতীয়ভাবে নজরুল জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে কবির স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশালে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। সম্মানীয় বক্তা কবির নাতনি খিলখিল কাজী। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কবির মাজারে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে। ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। নজরুল মেলা, নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, ছায়ানট, চ্যানেল আই জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ ব্যাপকভাবে সম্প্রচার করবে।